When We First Met – A Heart-Touching Love Story That Will Melt Your Soul
![]() |
স্বামী বিবেকানন্দ |
ভূমিকাঃ
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে যে কয়েকজন মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামী বিবেকানন্দ আবির্ভূত হয়ে জনসাধারণের দরিদ্রতা, কুসংস্কার, অশিক্ষা ইত্যাদি ব্যক্তিত্বকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। আমরা জানি যখন কোন জাতির উন্নতি স্থগিত হয় তখন সেই জাতিকে জাগরিত করার জন্য মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটা খুবই প্রয়োজন। সেরকমই উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষের হিন্দু জাতির কুসংস্কার, দরিদ্রতা ইত্যাদি দূর করে জাতির উন্নতি করার উদ্দেশ্যে মহান পুরুষ স্বামী বিবেকানন্দের আবির্ভাব হয়। তার আবির্ভাবের ফলে বাঙালি জাতির জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তার প্রচেষ্টায় আজ আমাদের উন্নত চিন্তা ধারণা, উন্নত সমাজ ব্যবস্থা, উন্নত ভাব ভাবনা মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলতে পারতেছি। তাই স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দু জাতি তথা ভারতবর্ষ এবং বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
জন্ম ও পরিচয়ঃ
মহাপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের 12 ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে অবস্থিত বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের বাবার নাম বিশ্বনাথ দত্ত। বিশ্বনাথ দত্ত উদার প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। বিশ্বনাথ দত্ত পেশায় ছিলেন উকিল। স্বামী বিবেকানন্দের মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। ভুবনেশ্বরী দেবী বাড়ির গৃহকর্মের কাজ করার পাশাপাশি ধর্ম গ্রন্থের প্রতি আগ্রহ ছিল।
স্বামী বিবেকানন্দের আসল নাম হল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্তু তাকে সবাই ছোটবেলায় বিলে নামে জানতো। অর্থাৎ তার ডাক নাম ছিল বিলে। তিনি ছোটবেলা থেকেই খুব সাহসী ছিলেন এবং ধার্মিকও ছিলেন। শৈশবকালে স্বামী বিবেকানন্দ খুব চঞ্চল ছিলেন। এর পাশাপাশি স্বামী বিবেকানন্দ মেধাবী প্রকৃতির বালক ছিলেন।
শিক্ষা জীবনে স্বামী বিবেকানন্দঃ
স্বামী বিবেকানন্দ অর্থাৎ নরেন্দ্রনাথ দত্ত মাত্র আট বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দ স্কুল ও কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বিজ্ঞান ধর্ম দর্শন ইতিহাস সামাজিক বিজ্ঞান শিল্প ইত্যাদি প্রভৃতি বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন।
স্বামী বিবেকানন্দের কর্মজীবনঃ
নরেন্দ্রনাথ দত্ত সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করার পর তার নাম হয় স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের তিরোধান এর পরে পরিব্রাজক হয়ে সারা ভারতে ভ্রমণ করেন। তারপর স্বামী বিবেকানন্দ মানব সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। গরিব-দুখী, অসুস্থ, অশিক্ষিত ইত্যাদি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়ে জ্ঞানের আলো প্রদান করেন। তিনি সারা ভারতে ভ্রমণ করে স্বদেশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে হিন্দু জাতি ও নিজের দেশকে সকলের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। তিনি মানুষের মধ্যে ঈশ্বর রয়েছে এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে কর্মজীবনে এগিয়ে যান। তিনি নিজেকে মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন স্থানে স্থানে ঘুরে ধর্ম ও সংস্কৃতি ও দেশপ্রেমের সম্বন্ধে আলোচনা করতে থাকেন। স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন জাতি এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশে নিজে এক নতুন রূপ গঠন করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন মঠ প্রতিষ্ঠা এবং শিষ্যত্ব দান করতে থাকেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের নির্দেশে স্বামী বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী গুরু ভাইদের নিয়ে একটি সংঘের প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামী বিবেকানন্দ সহ গুরু ভাইদের কঠিন পরিশ্রমে বরানগরের একটি পুরনো বাড়িতে প্রথম রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তাদের চরম দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হতো। তবুও তারা তাদের উদ্দেশ্য থেকেই কখনোই পিছু হাটে নি। সেখানে তাদের ভজন কীর্তন তপস্যা ও শাস্ত্র আলোচনার মাধ্যমে দিন কাটাতে হতো।
আমেরিকা যাত্রা ও ধর্মপ্রচারঃ
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ৩১শে মে স্বামী বিবেকানন্দ মুম্বই থেকে আমেরিকা যাত্রা করেন। আমেরিকায় স্বামী বিবেকানন্দের যাত্রা ছিল সাধারণ ও গরিব মানুষের জন্য। ভারতের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে এবং তাদের অর্থে তিনি আমেরিকা গিয়েছিলেন। তার বক্তব্য ছিল যদি এটা মায়ের ইচ্ছা হয় আমায় আমেরিকা যেতে হবে তাহলে আমি সাধারণ মানুষের অর্থেই আমেরিকা যাব।
ইংল্যান্ডে ধর্মপ্রচারঃ
১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে তিনি ইউরোপে যাত্রা করেন। এর কিছুদিন পর 1896 খ্রিস্টাব্দে ১৫ এপ্রিল আমেরিকা থেকে বিদায় নিয়ে আবার লন্ডনে ফিরে আসেন। স্বামী বিবেকানন্দ ইংল্যান্ডে পৌঁছে হিন্দু শাস্ত্রের বিস্ময়কর আধ্যাত্মিক তত্ব প্রচার করতে থাকেন। ইংল্যান্ডের মানুষের চোখ খুলেছেন তিনি। তার প্রচারে ইংল্যান্ডের বহু সম্প্রদায় এবং বহু মানুষ ন্যায়-নীতিবোধ সম্বন্ধে শিক্ষা নেয়। সর্বোপরি ইংল্যান্ডে গিয়ে ভারতীয় হিন্দু ধর্মের প্রচারে সার্থক হয়ে ওঠে। তিনি এইভাবে ভারতীয় হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রকে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে প্রচার করেছিলেন।
জাতীয় যুব দিবস পালনঃ
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে জাতীয় যুব দিবস পালন করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ১২ ই জানুয়ারি ভারতে জাতীয় যুব দিবস পালিত হয়। কারণ স্বামী বিবেকানন্দ দেশের প্রগতি ও অগ্রগতির জন্য যুবকদের মধ্যে শক্তির সঞ্চার ঘটায়।
উপসংহারঃ
স্বামী বিবেকানন্দের মত মানুষ ভারতের মাটিতে জন্মগ্রহণ নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তাই তাকে অনেক মনীষী আধুনিক ভারতের শ্রেষ্ঠ বলে আজও মনে করেন। ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তার চেষ্টায় ভারতীয় হিন্দু ধর্ম বিভিন্ন দেশে পৌঁছে গেছে। তাই ভারতীয় হিন্দু ধর্মের প্রচারক হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং চিরস্মরণীয়।
Comments
Post a Comment